আমরা করবো জয় নিশ্চয়!
জনাব মন্ত্রী,
অচিরেই আপনি হয়তো বলবেন, ভ্যাট দেয়ার ক্ষমতা না থাকলে সন্তানদের পড়াশুনা করানোর দরকার নাই। শিক্ষিত হওয়া টা একটা ‘রাবিশ’ বিষয়!
সেটা আপনি বলতেই পারেন। আপনি বলবেন বলেই তো মন্ত্রী হয়েছেন। আর সেগুলো শোনার জন্য আমরা সাধারণ জনগন তো অধীর হয়েই থাকি।
আজ কিছু বলার প্রয়োজন কে অগ্রাহ্য করতে পারছি না। এবার আপনি শুনেন প্লিজ :
বাংগালী, জাতি হিসেবে অনেক বেশি সাহসী। মাঝে মাঝেই প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই! যখন প্রয়োজন টা প্রিয়জনের জন্য তখন সাহসের পাশে দুঃসাহসও জায়গা করে নেয়। এবং সেটাও নিজ দায়িত্বে!
২০০৯ সালে আমার ছোট ভাই যখন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে, তখন তার স্বপ্ন ছিল সেনা কর্মকর্তা হওয়ার। আইএসএসবি তে চতুর্থ দিন এ তাকে ফিরে আসতে হয়। এরপর বিমানবাহিনী তে। স্বপ্ন পাইলট হবে। পরীক্ষা তে উর্ত্তীন হওয়ার পরও চোখের দৃষ্টিশক্তি ৬/৬ না হওয়ার কারনে বাদ পড়ে। ততদিনে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম সমাপ্ত।
আমরা কোনো ভাবেই এক বছর অপেক্ষা করতে রাজি ছিলাম না। এবার সাধ আর সাধ্যের দ্বন্দ্ব! আমি চিরকালই মানের ব্যাপারে আপোষহীন মানুষ। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর। খোঁজ খবর করে দেখলাম প্রায় নয় লাখ টাকা লাগবে।
বাবা প্রথম শ্রেনীর সরকারি কর্মকর্তা হয়েও সিদ্ধান্ত নিতে বেশ সময় নিলেন। প্রথমেই বললেন, এত টাকা কোথায় পাবো! আমি অবিচল, পড়াতে হবে এবং এখানেই। প্রয়োজনে শিক্ষা ঋণ নিবো।
তারপরের চার বছর এর গল্প তো কেবল সংযম এবং সংগ্রামের। প্রতি চার মাস পর পর ষাট হাজার টাকা। পঞ্চাশ এর পরের দশ হাজার আর কোনো ভাবেই জমানো যায় না। অনেক সামাজিকতা এবং লৌকিকতা বাদ দিতে হয়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বেছে নেয়া হয়েছে “যৎসামান্য কিংবা নূন্যতম” কে।
প্রায় নয় লাখ টাকা তো ব্যয় হয়েছে কেবল শিক্ষার পেছনে। তার সাথে যোগ করুন তার ঢাকা শহরে থাকা খাওয়ার খরচ। মেসে একজন ছেলে বা মেয়েকে থাকতে ও খেতে হলে অন্যান্য খরচ সহ কম করে হলেও দশ হাজার টাকা লাগে। চার বছরে যার পরিমান প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর পেছনে একজন মধ্যবিত্ত অভিভাবকের ব্যয় প্রায় চৌদ্দ লাখ টাকা!
এত কিছুর পরেও তারা আপনার আরোপকৃত ৭.৫ ভাগ ভ্যাট দিতে চায় না! আপনার মাথা টা যে এমনি এমনি গরম হয় না সে তো আমি বুঝি। কারন আমি এদেশের ‘রাবিশ’ আম জনতার একজন।
এবার স্বপ্নিল জগত থেকে বাস্তবে ফেরা যাক। চার বছরের ভ্যাট যুক্ত ডিগ্রী অর্জন করলেই যে, চাকরি আপনার জন্য অপেক্ষমান এমন তো নয়। এদেশে রেকর্ড পরিমান শিক্ষিত বেকার আছে। যারা দিনের পর দিন ‘ধারের’ টাকায় ব্যাংক ড্রাফট করে যাচ্ছে। যদি একটা চাকরি পাওয়া যায় সেই আশায় !
মাননীয় মন্ত্রী, শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে ব্যয় করতে এই জাতি কোনো দিন পিছপা হয়নি, হবেও না। শুধু তাদের সাধ্যের কথাও একটু মাথায় রাখবেন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ দ্বারা নির্ধারিত বোর্ডের বই পড়ে একই কারিকুলাম এবং প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে শিক্ষার্থী’রা যখন তাদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করতে চায় তাদের জন্য প্রথম বাধা আসে “উচ্চ শিক্ষায় আসন সংকট”। অদম্য’রা তাই ভর্তি হন “প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়” এ। অবকাঠামোগত অসংগতি আর ক্রমবর্ধমান টিউশন ফি!! সে তো তাদের জন্য নিয়তির পরিহাস।
আমার স্বল্প জ্ঞানে আমি যা বুঝি, মেধাবীদের জন্য “বৃত্তি” প্রদানের পাশাপাশি আপনার বিবেচনায় তথাকথিত কম মেধাবীদের জন্য “ভর্তুকি” ব্যবস্থা রাখুন। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ছাড়া, কোন জাতি কবে উন্নতি লাভ করেছে?
শিক্ষা তো পন্য নয় মিস্টার মন্ত্রী। শিক্ষা হচ্ছে অর্জিত জ্ঞান এবং মূল্যবোধের সমন্বয়। শিক্ষার কোনো পাবলিক কিংবা প্রাইভেট সেক্টর নেই। ওটা প্রতিষ্ঠানের বিশেষায়নের জন্য তুলে রাখুন। অলাভজনক খাতের উপর ভ্যাট আরোপ করা, আর যাই হোক সুবিবেচনার পরিচয় হতে পারে না।
অচিরেই আপনার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। অনেক অনেক শুভকামনা। নিজে ভালো থাকুন, জাতি কে ভালো রাখুন।
#No_Vat_On_Education
লেখক
সৈয়দা আখতার জাহান
লেকচারার, জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ।
এই লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজের। এখানে প্রতিক্ষণ ডট কমের কোন নিজস্ব বক্তব্য নেই